হ্যালো বন্ধুরা, আমাদের ব্যবসার কাজে হোক বা ব্যক্তিগত টাকা লেনদেন কেনাকাটা হোক, অনেক কারণে ডেবিট ব্যাংক থেকে নিয়ে থাকি। তবে ডেবিট কার্ড ব্যবহারের আগে আপনার অবশ্যই জানা উচিত ডেবিট কার্ড কী? এছাড়া ডেবিট কার্ডের সুবিধা অসুবিধা জেনে নিন।

ডেবিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

ডেবিট কার্ড কি? ডেবিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

ডেবিট কার্ড হলো নিজের বাড়িতে মাটির  ব্যাংকের মত, এখানে প্রথমত টাকা জমা করবে এরপর সেই টাকা খরচ করবেন। তেমনি ডেবিট কার্ডে আপনাকে টাকা জমাতে হবে।  আপনার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে বা কার্ডে যে পরিমাণ টাকা থাকবে সেই পরিমাণ টাকা ব্যবহার করতে পারবেন। কার্ড থেকে কখনোই এরচেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে পারবেন না বা তুলতে পারবেন না। ডেবিট কার্ড একটি পুরাই প্রি-পেইড সিমের মতো।

আরো পড়ুনঃ

1. ক্রেডিট কার্ড কী? ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা অসুবিধা!

2. টিন সার্টিফিকেট কিভাবে বাতিল করবেন?

ডেবিট কার্ড (Debit Card) সহজ ভাষায়, আমরা যখন একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যে টাকা জমা থাকে তা খরচ করার জন্য আমাদেরকে যে ATM কার্ডটি দেওয়া হয়, তাহাকে ডেবিট কার্ড বলে যা “ব্যাংক কার্ড” নামেও পরিচিত। ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা খরচ করার জন্য নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আগে থেকেই টাকা জমা থাকতে হবে।

তবে ক্রেডিট কার্ডের মত নিজের মাসিক ইনকাম বা জবের বেতন, ক্রেডিট লিমিট এই ধরনের কোন ব্যাপার নেই। শুধুমাত্র পার্থক্য এতটুকুই, আপনার নিজের একাউন্টে টাকা আছে সেটা থেকে টাকা আপনি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পেমেন্ট করছেন বা খরচ করছেন।

মনে করুন, আপনার নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ লাখ টাকা আছে। তাহলে ব্যাংক কর্তৃক আপনার অ্যাকাউন্টের বিপরীতে যে ডেবিট কার্ডটি প্রদান করা হবে, সেই কার্ডেও ওই ২ লাখ টাকাই জমা থাকবে। আপনিই যখন টাকা উত্তোলন বা কোথাও পেমেন্ট করবেন  ডেবিট কার্ডটি দিয়ে তখন আপনি যতটুকু টাকা খরচ করেছেন সেটা ইনস্ট্যান্টলি আপনার ব্যাংক হিসাব থেকেই কেটে নেওয়া হবে।

আসল কথা হলো পেমেন্টটি করা হয়েছে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেই। ডেবিট কার্ড নিজের পকেটে রাখা মানে বলতে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটিকেই সম্পূর্ণ ব্যালেন্সসহ আপনার পকেটে রাখা। মূলত এই সুবিধার জন্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করলে অ্যাকাউন্টের সঙ্গে একটি ডেবিট কার্ড ইস্যু করে দেওয়া হয়ে থাকে।ডেবিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য হল, ডেবিট কার্ড ইন্টারন্যাশনালি ভাবে কাজ করে না।

বে বিশেষ কোনক্ষেত্রে ব্যাংক এর শর্তানুসারে আপনাকে ডেবিট কার্ডটি বাংলাদেশের বাইরে ব্যাবহার করার সুযোগ দিতে পারে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ওপরেই নির্ভর করে। আপনার ডেবিট কার্ড যদি ইন্টারন্যাশনালি ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই একটি ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্টের প্রয়োজন পড়বে। সাধারণত ডেবিট কার্ডগুলো আমাদের বাংলাদেশের ভেতরে যেকোম ATM বুথ থেকে ক্যাশ উইথড্র করতে পারবেন কিংবা অনলাইনে পেমেন্ট করার কাজেই ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

প্রিপেইড ডেবিট কার্ড (Prepaid Debit Card)

বর্তমানে আমাদের দেশে বেশকিছু ব্যাংক বিশেষ ধরনের ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড ইস্যু করে থাকেন, এধরণের কার্ডকে "প্রিপেইড কার্ড" বলা হয়। এধরণের প্রিপেইড কার্ডের জন্য করার জন্য কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করার প্রয়োজন নেই। এজন্য আপনাকে ব্যবসায়ী কিংবা চাকুরিজীবী হতে হবে না।

এই প্রিপেইড কার্ডের জন্য আগে থেকেই কার্ডের বিপরীতে টাকা ডিপোজিট করতে হয় এবং ডিপোজিট করার পরে এই কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন। বিষয়টা মোবাইলফোনে টাকা রিচার্জ করে এরপর টাকা খরচ করার মতোই।

আপনার ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্ট থাকলে, আপনি ফরেইন কারেন্সি (USD, EUR, GBP) ডিপোজিট করতে পারবেন ও ছোট ছোট ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঞ্জেকশন গুলো করতে পারবেন। যেমনঃ গুগল-প্লে স্টোর থেকে পেইড অ্যাপ/গেমস কিনতে পারবেন। এছাড়াও বিদেশি ই-কমার্স সাইটগুলো থেকে পছন্দের প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন।

এছাড়া অনলাইন ব্যবসা বা কোন প্রডাক্ট প্রমোশন করতে ফেসবুক বুস্ট বা ইউটিউবে মার্কেটিং করতে পারবেন। এসব আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্যই আপনার পাসপোর্ট থাকার দরকার হবে। আমাদের দেশে কয়েকটি ব্যাংকে প্রিপেইড ডেবিট কার্ড দিয়ে থাকে। যেমনঃ ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের EBL Aqua Prepaid Card বেশ জনপ্রিয়।

ডেবিট কার্ডের সুবিধাসমূহ (Benefits of Debit Card)

ডেবিট কার্ড ব্যাংক একাউন্টের চলমান হিসেব এবং সঞ্চয়ী হিসেবের সাথে যুক্ত থাকে। তাই কেনাকাটায় ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধাগুলি হচ্ছে-

ফি (Fees): এই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সাড়া বছর সকল লেনদেন করলে, বার্ষিক কোন ফি বা চাঁদা দেয়া লাগবেনা। ডেবিট কার্ড মূলত বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় এবং কোন চাঁদা বা ফি প্রযোজ্য হয় না যদি না সঞ্চয়ী হিসেবের ওভার ড্রাফট সুবিধা ব্যবহার করেন।

নিয়ন্ত্রিত খরচ (Controlled costs): ডেবিট কার্ডের এটি খুবই ভাল দিক, কেননা কেনাকাটায় ডেবিট কার্ড কখনই খরচের সাধ্যের বাইরে যেতে পারবেন না। যদি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা না থাকে তবে কার্ড ঘষার মেশিনে ডেবিট কার্ড ঘষে টাকা তুলতেই পারবেন না। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাংক বিশেষ কোন ক্ষেত্রে ওভারড্রাফট সুবিধা দিয়ে থাকে ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে।77777777
সুদ বিহীন(No interest): ডেবিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুদ নিয়ে চিন্তিত হবে না যেহেতু কার্ড ব্যবহার করার আগেই নিজের টাকা ডিপোজিট করতে হয়।
চুরি হওয়া ঠেকাতে (To prevent thieves): ভুলবশত কারণে ডেবিট কার্ড চুরি হয়ে গেলে একটা সুবিধা পাবেন। কেননা বেশীরভাগ ডেবিট কার্ডেই কার্ডের মালিক নির্দিষ্ট সংখ্যক বার এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তুলতে পারে। এছাড়াও কার্ডের PIN নম্বর ডেবিট কার্ডের সমস্ত নিরাপত্তা বাড়িয়ে তোলে।

এর আগে আমরা জেনে নিয়েছি, ডেবিট কার্ড কী এবং ডেবিট কার্ডের সুবিধা সমূহ। এখন ডেবিট কার্ডের সুবিধা অসুবিধা গুলোর মধ্যে এই কার্ডের অসুবিধা গুলো কি কি জেনে নিব।

ডেবিট কার্ডের অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Debit Card) নিম্নে ডেবিট কার্ডের অসুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো-

হ্রাসকৃত পুরস্কার পয়েন্ট (Reduced reward points):

মরা এর জেনেছিলাম ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা হতে প্রাপ্ত পুরস্কার পয়েন্ট পাওয়া যায়। তবে ডেবিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করলে পাওয়া যায়, কিন্তু ক্রেডিট কার্ড থেকে ডেবিট কার্ডের পুরুষ্কার পয়েন্ট অনেক কম। এছাড়াও আমাদের দেশে অনেক শপে ডেবিট কার্ড দিয়ে লেনদেনে করলে  কোন প্রকার পুরস্কার পয়েন্ট প্রদান করে না।

• ক্রেডিট স্কোর বাড়ায় না (Credit scores not increase):

ব্যক্তিগত লোন নেওয়ার জন্য ক্রেডিট স্কোর খুবই জরুরি। যদি আপনার ডেবিট কার্ডের লেনদেন সুবিধাজনক না হয় তাহলে ক্রেডিট স্কোর জমা হবে না। তাই ব্যক্তিগত লোন নিতে আপনার ক্রেডিট স্কোর বাড়াতে হবে।

• নিয়মিত ব্যালান্স চেক (Regular balance checks):

আপনার ডেবিট কার্ড দিয়ে খরচ বা টাকা উত্তোলন করেন তা যদি লিমিট ব্যালেন্স ওভার হয়। তাহলে ওভারড্রাফট জরিমানা হবে, এজন্য খরচ করার পূর্বে আপনার একাউন্টের ব্যালেন্স নিয়মিত চেক করবেন।

পরিশেষে বলতে পারি, ক্রেডিট কার্ডের মত ডেবিট কার্ডেরও সুবিধা ও অসুবিধা দুইটিই আছে। তাই প্রতিদিন ব্যবহার করার আগে ভাববেন খরচের পরিমাণ লিমিট অতিক্রম না করে। একটি কার্ড হাতে থাকলে অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যায়, তাই চাহিদা সীমার অতিরিক্ত খরচ করবেননা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন